পাঠের শিরোনাম: বিধেয়ক কি?
ভূমিকাঃ যুক্তিবাক্যে
ব্যবহৃত পদদ্বয়ের মধ্যে সম্পর্ক কি তা স্পষ্ট করতে যুক্তিবিদ্যায় বিধেয়ক
সম্পকীত আলোচনা করা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে যুক্তিবিদ্যার জনক এ্যারিস্টটল
প্রথম আলোচনার সূত্রপাত করেন। তিনি উদ্দেশ্য পদের সাথে সম্পর্কের
ভিত্তিতে বিধেয় পদের যে পরিচয় তুলে ধরেছেন তা যুক্তিবিদ্যায় ‘বিধেয়ক’ নামে
পরিচিত।
বিধেয়কের সংজ্ঞাঃ যুক্তিবিদ এ্যারিস্টটল একটা যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদের সাধে উদ্দেশ্য পদের যেসব সম্পর্ক হতে পারে সে সম্পর্কসমূহকে বিধেয়ক বলে অভিয়িত করেছেন। কিন্তু লক্ষ্যনীয় যে নঞর্থক যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য পদের সাথে বিধেয় পদের কোন সম্পর্ক থাকে না বলে নঞর্থক যুক্তিবাক্যে বিধেয়ক থাকে না। এবং কোন যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদ বিশিষ্ট পদ হলে সে ক্ষেত্রে বিধেয়ক থাকে না। সে ভিত্তিতে বলা যায় যে, শ্রেণীবাচক বিধেয় পদ সম্বলিত কোন সদর্থক যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদের সাথে উদ্দেশ্য পদের যেসব সম্পর্ক হতে পারে, সে সম্পর্কসমূহকে বিধেয়ক বলে।
যেমনঃ মানুষ হয় মরণশীল। এ যুক্তিবাক্যে ‘মানুষ’ পদটি হচ্ছে উদ্দেশ্য এবং ‘মরণশীল’ পদটি হচ্ছে বিধেয়। আর ‘মানুষ’ পদের সাথে ‘মরণশীল’ পদের যে বিশেষ সম্পর্ক বিদ্যমান তার নাম বিধেয়ক।
এ প্রসঙ্গে লাট্টা ও ম্যাকবেথ বলেছেন “বিধেয়ককে সংজ্ঞায়িত করা যায় একটি সদর্থক যুক্তিবাক্যের সম্ভবপর বিধেয় হিসাবে ব্যবহৃত সাধারণ পদসমুহের শ্রেণীবিভাগ হিসাবে, যে শ্রেণীবিভাগের ভিত্তি হচ্ছে উদ্দেশ্যের সাথে তাদের সম্পর্ক।”
উপসংহারঃ বিধেয়ক হলো পদ দ্বয়ের মধ্যের সম্পর্কের নাম যা উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক স্পষ্ট করে তোলে। বিধেয়কের সংজ্ঞাঃ যুক্তিবিদ এ্যারিস্টটল একটা যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদের সাধে উদ্দেশ্য পদের যেসব সম্পর্ক হতে পারে সে সম্পর্কসমূহকে বিধেয়ক বলে অভিয়িত করেছেন। কিন্তু লক্ষ্যনীয় যে নঞর্থক যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য পদের সাথে বিধেয় পদের কোন সম্পর্ক থাকে না বলে নঞর্থক যুক্তিবাক্যে বিধেয়ক থাকে না। এবং কোন যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদ বিশিষ্ট পদ হলে সে ক্ষেত্রে বিধেয়ক থাকে না। সে ভিত্তিতে বলা যায় যে, শ্রেণীবাচক বিধেয় পদ সম্বলিত কোন সদর্থক যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদের সাথে উদ্দেশ্য পদের যেসব সম্পর্ক হতে পারে, সে সম্পর্কসমূহকে বিধেয়ক বলে।
যেমনঃ মানুষ হয় মরণশীল। এ যুক্তিবাক্যে ‘মানুষ’ পদটি হচ্ছে উদ্দেশ্য এবং ‘মরণশীল’ পদটি হচ্ছে বিধেয়। আর ‘মানুষ’ পদের সাথে ‘মরণশীল’ পদের যে বিশেষ সম্পর্ক বিদ্যমান তার নাম বিধেয়ক।
এ প্রসঙ্গে লাট্টা ও ম্যাকবেথ বলেছেন “বিধেয়ককে সংজ্ঞায়িত করা যায় একটি সদর্থক যুক্তিবাক্যের সম্ভবপর বিধেয় হিসাবে ব্যবহৃত সাধারণ পদসমুহের শ্রেণীবিভাগ হিসাবে, যে শ্রেণীবিভাগের ভিত্তি হচ্ছে উদ্দেশ্যের সাথে তাদের সম্পর্ক।”
পাঠের শিরোনাম: বিধেয় ও বিধেয়কের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ বিধেয় ও বিধেয়কের মাঝে কিছু শাব্দিক সাদৃশ্য থাকলেও উভয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে উভয়ের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়গুলো আলোচনা করা হল-
বিধেয় ও বিধেয়কের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. যে পদ দ্বারা উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে বিধেয় বলে। যেমন- ‘সব ঘোড়া হয় প্রাণী’- বাক্যে ‘প্রাণী’ পদ ‘ঘোড়া’ পদকে স্বীকার করেছে। এক্ষেত্রে ‘প্রাণী’ পদ বিধেয়। পক্ষান্তরে, উদ্দেশ্যের সাথে বিধেয়ের যে সম্পর্ক তাকেই বলে বিধেয়ক।,যেমন- ‘সব ঘোড়া হয় প্রাণী’- যুক্তিবাক্যে ‘প্রাণী’ পদের ব্যক্ত্যর্থ ‘ঘোড়া’ পদের তুলনায় অধিক। সে হিসাবে ‘প্রাণী’ ও ‘ঘোড়া’ পদের মাঝে যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তা-ই হল বিধেয়ক। সুতরাং বিধেয় ও বিধেয়ক এক জিনিষ নয়।
২. বিধেয় একটি পদ। এটি হচ্ছে যুক্তিবাক্যের একটি অংশ যা কোন সময় একটি শব্দ দ্বারা বা একাধিক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। পক্ষান্তরে, বিধেয়ক কোন পদ নয়। বিধেয়ক একটি সম্পর্কের নাম। বিধেয়ক কোন পদ নয় বলে তা কোন শব্দ বা শব্দ সমষ্টি দ্বারা গঠিত নয়।
৩. সদর্থক হোক আর নঞর্থক হোক যে কোন যুক্তিবাক্যেই উদ্দেশ্য যেমন থাকে তেমনি বিধেয় থাকে। পক্ষান্তরে, বিধেয়কের অস্তিত্ব কেবলমাত্র সদর্থক যুক্তিবাক্যে সম্ভব। নঞর্থক যুক্তিবাক্যে যেহেতু উদ্দেশ্য পদের সাথে বিধেয় পদের সম্পর্ককে অস্বীকার করা হয় সেহেতু এরূপ যুক্তিবাক্যে বিধেয়ক থাকে না।
৪. যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদ বিশিষ্ট পদ হতে পারে। কিন্তু যেসব যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদ বিশিষ্ট পদ, সেসব যুক্তিবাক্যে বিধেয়কের প্রশ্ন উঠে না। কেননা, একটি বিশিষ্ট পদ অসংখ্য গুন নির্দেশ করার কারণে এরূপ পদ সম্বলিত কোন যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্যের সাথে বিধেয়ের কোন সম্পর্ক নির্ণয় করা য়ায় না। পক্ষান্তরে, শ্রেণীবাচক বিধেয় পদের সাথে উদ্দেশ্য পদের সম্পর্ক থাকে বা বিধেয়ক থাকে।
উপসংহারঃ বিধেয় একটি পদের নাম হলেও বিধেয়ক কোন পদের নাম নয়। বরং তা উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যেকার সম্পর্কের নাম।
পাঠের শিরোনাম: জাতি ও উপজাতি ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকাঃ জাতি ও উপজাতি উভয়ই শ্রেণীবাচক পদ এবং তা সাপেক্ষ পদও বটে। এদের একটিকে বাদ দিয়ে অপরটির কোন অর্থই হয় না।
জাতি ও উপজাতিঃ যুক্তিবিদ পরফিরি এ্যারিষ্টটলীয়
বিধেয়কের তালিকা সংশোধন করে পাঁচ প্রকার বিধেয়কের কথা বলেছেন। যথাঃ জাতি,
উপজাতি, বিভেদক লক্ষণ বা লক্ষণ, উপলক্ষণ ও অবান্তর লক্ষণ। নিম্নে জাতি,
উপজাতি সর্ম্পকে আলোচনা করা হল-
জাতিঃ জাতি একটি শ্রেণীবাচক পদ। তবে যে কোন শ্রেণীবাচক পদকে জাতি বলা যায় না। কেননা, কোন শ্রেণীকে জাতি বলার অর্থ হলো তা অন্য এক বা একাধীক শ্রেণীর তুলনায় জাতি। এ কারণেই জাতির সংজ্ঞায় বলা হয়, কোন সদর্থক যুক্তিবাক্যে দুটি শ্রেণীবাচক পদের মাঝে যদি এমন সম্পর্ক থাকে যে, তাদের একটির ব্যক্ত্যর্থ তুলনামূলকভাবে বেশী, আর বেশী ব্যক্ত্যর্থ সম্পন্ন শ্রেণী কম ব্যক্ত্যর্থ সম্পন্ন শ্রেণীকে অর্ন্তভূক্ত করতে পারে, তাহলে অধিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পন্ন শ্রেণী কম ব্যক্ত্যর্থ সম্পন্ন শ্রেণীর জাতি বলে বিবেচিত হবে।
জাতি প্রসঙ্গে যুক্তিবিদ শাস্ত্রি বলেন, “জাতি হচ্ছে একটি বৃহত্তর শ্রেণী যা তার অধিনস্থ কয়েকটি ক্ষুদ্রতর শ্রেণীর সাথে সম্পর্কের দিক দিয়ে বিবেচিত হয়; অন্য কথায়, জাতি হচ্ছে সংকীর্ণতর শ্রেণী সমূহের দ্বারা গঠিত একটি ব্যাপকতর শ্রেণী।”
উদাহরণ ও বিশ্লেষণঃ ‘সকল মানুষ হয় জীব’- যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য ‘মানুষ’ এবং বিধেয় ‘জীব’ পদ দুটি শ্রেণীবাচক পদ। তবে এদের মধ্যে ‘জীব’ পদের ব্যক্ত্যর্থ ‘মানুষ’ পদের ব্যক্ত্যর্থের তুলনায় বেশী। সে হিসাবে ‘জীব’ পদ ‘মানুষ’ পদকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে ‘জীব’ পদটি হচ্ছে ‘মানুষ’ পদের জাতি।
উপজাতিঃ
উপজাতি একটা শ্রেণীবাচক পদ। তবে কোন শ্রেণীকে উপজাতি বলার অর্থ হলো অন্য
কোন জাতির তুলনায় উপজাতি রূপে বিবেচনা করা। এ জন্যই উপজাতির সংজ্ঞায় বলা
হয়, কোন সদর্থক যুক্তিবাক্যে দুটি শ্রেণীবাচক পদের মাঝে যদি এমন সম্পর্ক
থাকে যে, তাদের একটার ব্যক্ত্যর্থ তুলনামূলকভাবে কম, আর কম ব্যক্ত্যর্থ
সম্পন্ন শ্রেণী অধিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পন্ন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে,
তাহলে কম ব্যক্ত্যর্থ সম্পন্ন শ্রেণী অধিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পন্ন শ্রেণীর
উপজাতি বলে বিবেচিত হবে।
উপজাতি সম্পর্কে যুক্তিবিদ শাস্ত্রী
বলেন, “উপজাতি হচ্ছে একটি ক্ষুদ্রতর শ্রেণী যা অন্তর্ভুক্ত হয় এমন কোন
বৃহত্তর শ্রেণীর সাথে সম্পর্কের দিক দিয়ে বিবেচিত হয়; অন্য কথায় উপজাতি
হচ্ছে জাতির অন্তর্ভুক্ত একটি সংকীর্ণতর শ্রেণী।”
উদাহরণ ও বিশ্লেষণঃ ‘সকল বাঙালি হয় মানুষ’ – যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য ‘বাঙালি’ এবং বিধেয় ‘মানুষ’ পদ দুটি শ্রেণীবাচক পদ। তবে এ দুটি পদের মধ্যে ‘বাঙালি’ পদের ব্যক্ত্যর্থ কম, আর ‘মানুষ’ পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশী। সে হিসাবে ‘বাঙালি’ শ্রেণী ‘মানুষ’ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে ‘বাঙালি’ পদ হলো ‘মানুষ’ পদের উপজাতি।
উপসংহারঃ জাতি ও উপজাতি সর্ম্পকে পরিশেষে একথা বলা যায় যে, জাতি একটি শ্রেণীবাচক বড় ধারনা এবং উপজাতি তার অন্তরগত ছোট ধারনা।উদাহরণ ও বিশ্লেষণঃ ‘সকল বাঙালি হয় মানুষ’ – যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য ‘বাঙালি’ এবং বিধেয় ‘মানুষ’ পদ দুটি শ্রেণীবাচক পদ। তবে এ দুটি পদের মধ্যে ‘বাঙালি’ পদের ব্যক্ত্যর্থ কম, আর ‘মানুষ’ পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশী। সে হিসাবে ‘বাঙালি’ শ্রেণী ‘মানুষ’ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে ‘বাঙালি’ পদ হলো ‘মানুষ’ পদের উপজাতি।
পাঠের শিরোনাম: বিভেদক লক্ষণ বা লক্ষণ বলতে কী বোঝ?
ভূমিকাঃ বিভেদক লক্ষণ বা লক্ষণ হল এমন কিছু গুণাবলী যা অপরাপর উপজাতি হতে একটি উপজাতিকে পৃথক করে।
বিভেদক লক্ষণ বা লক্ষণঃ
যে গুণ বা গুণাবলী একই জাতির অন্তরভূক্ত একটি উপজাতিকে অপরাপর উপজাতি থেকে
পৃথক করে সে গুণ বা গুণাবলীকে উপজাতিটির লক্ষণ বা বিভেদক লক্ষণ বলা হয়। যুক্তিবিদ মেলোন বলেন, “একটি লক্ষণ হচ্ছে সেই গুণ বা গুণ সমষ্টি যার দ্বারা একই জাতির অন্তরভূক্ত একটি উপজাতিকে অপরাপর থেকে পৃথক করা হয়।”
উদাহরণ ও বিশ্লেষণঃ
প্রাণী জাতির অন্তরগত উপজাতিসমূহ হল মানুষ, ঘোড়া, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি। এসব
উপজাতির মধ্যে ‘প্রাণীত্ব বা জীববৃত্তি’ সাধারণভাবে উপস্থিত থাকলেও, কেবল
মানুষ উপজাতির ক্ষেত্রেই ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ রয়েছে। ফলে ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ মানুষকে
সমজাতিয় উপজাতিসমূহ থেকে পৃথক ও বিশিষ্ট করে রেখেছে। তাই বুদ্ধিবৃত্তি হল
মানুষ উপজাতির লক্ষণ বা বিভেদক লক্ষণ।
উপসংহারঃ বিভেদক লক্ষণ বা লক্ষণ সব সময় জাত্যর্থ বা তার অংশ বিশেষ হয় যা অপরাপর উপজাতি হতে একটি উপজাতিকে পৃথক করে।
পাঠের শিরোনাম: উপলক্ষণ ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকাঃ যুক্তিবিদ পরফিরির সংশোধীত তালিকা মতে বিধেয়ক পাঁচ প্রকার। তার মধ্যে উপলক্ষণ অন্যতম।
উপলক্ষণঃ যে গুণ কোন একটা পদের জাত্যর্থ নয়, কিন্তু জাত্যর্থ থেকে অনিবার্য়ভাবে নিঃসৃত হয়, তাকে উপলক্ষণ বলে। যুক্তিবিদ ল্যাটা ও ম্যাকবেথ বলেন,
“একটি উপলক্ষণ হচ্ছে সেই গুণ যা কোন পদের জাত্যর্থের অংশবিশেষ রূপে গঠিত
নয়, কিন্তু যা হয় কারণ থেকে কার্ষরূপে অথবা আশ্রয়বাক্য থেকে সিন্ধান্তরূপে
জাত্যর্থ হতে নিঃসৃত হয়।”উদাহরণ ও বিশ্লেষণঃ ‘সব মানুষ হয় চিন্তাশীল প্রাণী’- বাক্যে মানুষ শ্রেণীর ক্ষেত্রে ‘চিন্তাশীলতা’ অন্যতম উপলক্ষণ। চিন্তাশীলতা গুনটি মানুষ পদের জাত্যর্থের অংশ নয়, কিন্তু মানুষের জাত্যর্থ ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ থেকেই গুনটি উদ্ভূত হয়েছে। উপলক্ষণ দু’প্রকারের হতে পারে। যথাঃ ( ক ) জাতিগত উপলক্ষণ ( খ ) উপজতিগত উপলক্ষণ।
( ক ) জাতিগত উপলক্ষণঃ যখন কোন পদের উপলক্ষণ তার জাতির জাত্যর্থ থেকে নিঃসৃত হয় তখন তাকে জাতিগত উপলক্ষণ বলে। যেমনঃ মানুষের ‘মরণশীলতা’ গুণটি মানুষের জাতি জীব- এর জাত্যর্থ ‘জীববৃত্তি’ থেকে নিঃসৃত। কারণ যেখানেই জীবন আছে, সেখানেই মৃত্যু আছে।
( খ ) উপজাতিগত উপলক্ষণঃ যখন কোন পদের উপলক্ষণ উপজাতির নিজস্ব জাত্যর্থ বা লক্ষণ থেকে নিঃসৃত হয় তখন তাকে উপজাতিগত উপলক্ষণ বলে। যেমনঃ মানুষের ‘বিচারশক্তি’ গুণটি মানুষের লক্ষণ ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ থেকে নিঃসৃত। কেননা বুদ্ধিবৃত্তি আছে বলেই মানুষের মধ্যে বিচারশক্তি গুণের আবির্ভাব ঘটেছে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, উপলক্ষণ পদের জাত্যর্থের সরাসরি অংশ না হলেও তা জাত্যর্থ থেকেই অনুমিত হয়।
পাঠের শিরোনাম: অবান্তর লক্ষণ ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকাঃ যে বৈশিষ্ট কোন শ্রেণীর জাত্যর্থ নয় বা জাত্যর্থ থেকে নিঃসৃতও নয় তাই অবান্তর লক্ষণ।
অবান্তর লক্ষণঃ
যে গুণ বা গুণাবলী কোন পদের জ্যাত্যর্থের অংশ নয় অথবা জাত্যর্থ থেকে
অনুসৃত নয় অথচ কোন ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাকে অবান্তর
লক্ষণ বলে।
যুক্তিবিদ ল্যাটা ও ম্যাকবেথ বলেন, “একটি অবান্তর লক্ষণ হচ্ছে সেই গুণ যা কোন পদের জ্যাত্যর্থের অংশও নয়, অথবা তার জ্যাত্যর্থের সাথে অনিবার্যরূপে সম্পর্কযুক্ত নয়।”
উদাহরণ ও বিশ্লেষণঃ ‘হাস্রপ্রিয়’ গুণটি মানুষ পদের একটি অবান্তর লক্ষণ। এ গুণটি মানুষের জাত্যর্থও নয় আবার জাত্যর্থ থেকে উদ্ভূত নয়। মানুষ পদের জাত্যর্থ – জীববৃত্তি + বুদ্ধিবৃত্তি-এর সাথে ‘হাস্রপ্রিয়’ গুণটির কোন কার্ষকারণ সম্পর্ক নেই।
যুক্তিবিদ ল্যাটা ও ম্যাকবেথ বলেন, “একটি অবান্তর লক্ষণ হচ্ছে সেই গুণ যা কোন পদের জ্যাত্যর্থের অংশও নয়, অথবা তার জ্যাত্যর্থের সাথে অনিবার্যরূপে সম্পর্কযুক্ত নয়।”
উদাহরণ ও বিশ্লেষণঃ ‘হাস্রপ্রিয়’ গুণটি মানুষ পদের একটি অবান্তর লক্ষণ। এ গুণটি মানুষের জাত্যর্থও নয় আবার জাত্যর্থ থেকে উদ্ভূত নয়। মানুষ পদের জাত্যর্থ – জীববৃত্তি + বুদ্ধিবৃত্তি-এর সাথে ‘হাস্রপ্রিয়’ গুণটির কোন কার্ষকারণ সম্পর্ক নেই।
যেমন হতে
পারে কোন ব্যক্তি বিশেষের গুণ বা কোন জাতি বিশেষের গুণ। আবার ক্ষেত্র
বিশেষে তা হতে পারে বিচ্ছেদ্য বা অবিচ্ছেদ্য । কাজেই অবান্তর লক্ষণ
মোটামুটি চার প্রকারের। যথা-
(১) ব্যক্তিগত অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণঃ যে অবান্তর লক্ষণ কোন
ব্যক্তি বিশেষের বেলায় সর্বদায় বর্তমান এবং কোনভাবেই পরিবর্তন করা যায় না
তাকে ব্যক্তিগত অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ বলে। যেমন- কোন ব্যক্তির
জন্মস্থান ও জন্ম তারিখ।
(২) ব্যক্তিগত বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণঃ যে অবান্তর লক্ষণ কোন ব্যক্তি বিশেষের বেলায় সর্বদায় বর্তমান থাকে না এবং যা মাঝে মাঝেই পরিবর্তিত হতে পারে তাকে ব্যক্তিগত বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ বলে। যেমনঃ কোন ব্যক্তির পোষাক, আচার-ব্যবহার, জীবিকা ইত্যাদি।
(৩) জাতিগত অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণঃ যে অবান্তর লক্ষণ কোন জাতির অন্তর্গত সকলের ক্ষেত্রেই বর্তমান তাকে জাতিগত অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ বলে। যেমন- মানুষ জাতির ক্ষেত্রে ‘দ্বি-পদ’ গুণ।
(৪) জাতিগত বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণঃ যে অবান্তর লক্ষণ কোন জাতির অন্তর্গত সকলের ক্ষেত্রেই বর্তমান নয় তাকে জাতিগত বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ বলে। যেমন- ফুলের বেলায় ‘লাল রঙ’।
(২) ব্যক্তিগত বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণঃ যে অবান্তর লক্ষণ কোন ব্যক্তি বিশেষের বেলায় সর্বদায় বর্তমান থাকে না এবং যা মাঝে মাঝেই পরিবর্তিত হতে পারে তাকে ব্যক্তিগত বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ বলে। যেমনঃ কোন ব্যক্তির পোষাক, আচার-ব্যবহার, জীবিকা ইত্যাদি।
(৩) জাতিগত অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণঃ যে অবান্তর লক্ষণ কোন জাতির অন্তর্গত সকলের ক্ষেত্রেই বর্তমান তাকে জাতিগত অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ বলে। যেমন- মানুষ জাতির ক্ষেত্রে ‘দ্বি-পদ’ গুণ।
(৪) জাতিগত বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণঃ যে অবান্তর লক্ষণ কোন জাতির অন্তর্গত সকলের ক্ষেত্রেই বর্তমান নয় তাকে জাতিগত বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ বলে। যেমন- ফুলের বেলায় ‘লাল রঙ’।
উপসংহারঃ অবান্তর লক্ষণ যেহেতু জাত্যর্থ থেকে আসে না তাই এটি একটি পদ সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করে।
সহায়ক গ্রন্হাবলীঃ
১. উচ্চ মাধ্যমিক যুক্তিবিদ্য- ১ম পত্র (অবরোহ)
শরীফ হারুন
২. উচ্চ মাধ্যমিক যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (অবরোহ)
প্রফেসর মোঃ গোলাম মোস্তফা
৩. উচ্চ মাধ্যমিক যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (অবরোহ)
প্রফেসর মোহাম্মদ নূরনবী।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার : http://www.kamdc.com
No comments:
Post a Comment